মোহাম্মদ ফারিস একজন ইসলাম সম্পর্কে নিদারুণ জ্ঞান অর্জনকারী একজন পন্ডিত ব্যাক্তি। তিনি বিশ্বের অনেক দেশের ইসলামিক মোটিভেশনাল স্পিকার। তাঁর লেখা এই বইটি এক কথায় দূর্দান্ত এক লেখনী।
প্রোডাক্টিভ মুসলিম বইটি এমন একটি বই, যেটা হচ্ছে আমাদের মুসলিমদের পথচলার এক রুল মডেল। যাঁরা সবসময় বলেন, আমাদের একমাত্র মোটিভেশন হচ্ছে কোরআন এবং হাদীস। আমরা অন্যান্য বই পড়তে আগ্রহী নই, তাঁদের জন্যই এই বইটি পারফেক্ট। কারণ এখানে লেখক ইসলাম, কোরআন এবং হাদীসের আলোকে প্রোডাক্টিভিটির বর্ণনা করেছেন। আমাদের আইডল হযরত মোহাম্মদ (স.) ছিলেন একজন প্রোডাক্টিভ পার্সন। সব মিলিয়ে মুসলিম হিসেবে আমাদের কীভাবে প্রোডাক্টিভ হতে হবে, এই ব্যাপারেই বইয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে প্রোডাক্টিভিটি কী, প্রোডাক্টিভিটি সম্পর্কে আমাদের কী কী ভ্রান্ত ধারণা এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। লেখক বলেছেন আমাদের সবসময় প্রোডাক্টিভ হতে হবে, আমাদের সময়ের কাজ সময়ের আগেই দ্রুত প্রোডাক্টিভিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। প্রোডাক্টিভিটি সহজেই হচ্ছে মনোযোগ×শারিরীক সক্ষমতা×সময়।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইসলাম এবং প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা মুসলমান হিসেবে আমাদের একমাত্র কাজই হচ্ছে ইবাদত বন্দেগি করা, লেখক এখানে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আমাদের কাজ, অজুহাত, সময় নেই এসব বলা যাবে না। আমাদের সব কিছুকেই ইবাদতের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে, আমরা যেহেতু আল্লাহর হুকুমের দাস সেই হিসেবে আমাদের সমস্ত কর্মকান্ডই হতে হবে ইবাদত নির্ভর।
তৃতীয় অধ্যায় স্পিরিচুয়াল প্রোডাক্টিভিটি। অর্থাৎ আধ্যাত্মিকতা কীভাবে আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায় সেই হিসেবে, এখানে আমাদের দুনিয়া এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবন একসাথে সংযোগ রেখে কীভাবে চলা যায় সেই কথা বর্ণনা করেছেন। এজন্য কীভাবে আমরা এনার্জি সংগ্রহ করবো এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায় ফিজিক্যাল প্রোডাক্টিভিটি। সবচেয়ে বড় যে অধ্যায়, যেখানে আমাদের ফিজিক্যাল ফিটনেশ, ডায়েট, নিউট্রিশন সবকিছু নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। কীভাবে ঘুমের মাধ্যমে আমরা একটি ফিটনেস লাইফ কাটাতে পারি, পাওয়ার ন্যাপের প্রয়োজনীয়তা, কম ঘুমালে কী হয়… ইত্যাদি আলোচনা ।
তারপর আমাদের শরীরের পর্যাপ্ত পুষ্টি অর্জন, সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখার ফলে কীভাবে আমাদের দেহের ব্যালেন্স রাখা যায়, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যভাস ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার সবই প্রোডাক্টিভিটির আওতায় এবং তা কীভাবে তা জানতে হলে বইটির এই অধ্যায় মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। ব্যায়াম বা জিম আমাদের জীবনে কতোটুকু দরকার এটাও ইসলাম কীভাবে করতে বলেছে, আমাদের অজুহাত এবং ব্যস্ততাকে তুড়ি মেরে সব ভেস্তে দিয়ে সময় বের করে দেখাবেন।
আরও বাকী ৩টি অধ্যায়ে লেখক আলোচনা করেছেন, সোশ্যাল প্রোডাক্টিভিটি, গোল এবং ভিশনের সঙ্গে প্রোডাক্টিভিটির সম্পর্ক, প্রোডাক্টিভ অভ্যাস গঠন এবং ৮ম অধ্যায়ে রমজান এবং প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
কীভাবে রমজান মাসে শতভাগ প্রোডাক্টিভিটি অর্জন করা সম্ভব, রমজানের স্লিপ ম্যানেজম্যান্ট থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় খাদ্য পুষ্টি সবকিছুই এখানে আলোচনা করা হয়েছে, রয়েছে প্রয়োজনীয় রুটিন।
সর্বশেষ অধ্যায়ে আছে, মৃত্যু পরবর্তী প্রোডাক্টিভিটি অর্জন। মৃত্যুর পর ৩টি মাধ্যমে আমাদের কবরে নেক আমল যাবে সেটা হলোঃ নেক আমল, দান সদকা, নেক সন্তান। এবং কীভাবে আমাদের দোয়া কবুল করানোর জন্য দোয়া করতে হয়, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বইটি সম্পর্কে বলতে গেলে এখানে সবচেয়ে বেশি কোরআন, হাদীস এবং ইসলামের আলোকোজ্জ্বল প্রোডাক্টিভিটির আলোচনা করা হয়েছে। আছে সাইন্টিফিক অনেক ব্যাখা বিশ্লেষণ, বিভিন্ন বড় বড় মোটিভশনাল বইয়েরও কয়েকটা লাইন এখানে উল্লেখ আছে। সবশেষে রয়েছে, বিরাট তথ্য সূত্র।
সুতরাং, এই মাস থেকেই নিজেকে প্রোডাক্টিভ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে বইটি এখনই পড়া উচিত, পাশাপাশি বইটি সব ধর্মের মানুষেরই পড়া উচিত। বইয়ের যে আলোচনা করা হয়েছে, তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরই অংশমাত্র।
Reviews
There are no reviews yet.